আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসকে সামনে রেখে আমরা নারীদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাঁরা কিভাবে সমাজে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, কিভাবে প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন নিপীড়নের। বাছাই করা কয়েকটি লেখা প্রকাশ করলাম আমরা এখানে।
♦
আমি যখন কোনো ভুল করি তখন আমার পরিবার আমাকে যা তা বলে,শাস্তিও দেয়।
কিন্তু যখন ভাই এমন কিছু করে তখন বাবা মা সেটা চেপে যায়,আর সেটা নিয়ে কেউ মাতামাতি করে না।
একবার যখন আমি রাগ করে বান্ধবীর বাসায় ছিলাম আর সন্ধার পর বাসায় আসি তখন এসে দেখি পাশের বাসার মহিলা গুলো আমাদের বাসায় বসে গসীপ করছে...বলছে মেয়ে মানুষের রাগ ভালো না,মেয়ে মানুষের ভর সন্ধ্যায় বাহিরে থাকা ঠিক না হ্যাং ত্যান..
আমার মা আমাকে দেখে তাদের সামনেই বলে বসে মেয়ে জন্ম দেয়া পাপ।
কিন্তু যদি এই একই কাজটা ভাই করে তাহলে বাবা মা দুজনে হতাশ হয়ে পড়ে,খুব অনুনয় বিনয় করে ভাইকে বলে বাবা বাসায় আয়,আর তোকে বকবো না। তখন বাসায় কোনো আশেপাশের মহিলারা আসে না, মজা নিতে।
যখন আমি ক্লাস নাইনে পড়তাম তখন অন্য এলাকার এক ছোকড়া টাইপ বদমাস আমার পিছন পিছন ঘুরে বেড়াতো,মাঝে মাঝে ডাকতো। আমি শুনেও না শোনার ভান করতাম,ভয়ে কাউকে বলতেও পারতাম না।
কিন্তু পাড়াপড়শির গোয়েন্দাগিরিতে খবরটা মায়ের কানে যায়।
মা বলে কি এমন করিস যে ঐ ছেলে তোর পিছে পিছে চলে? আগে কেনো বলিসনি আমাকে?
তুই যদি দেখিস ছেলেটা তোকে বিরক্ত করে তাহলে তুই অন্য রাস্তা দিয়ে যেতিস না কেনো?
কাল থেকে আর তোকে স্কুলে যেতে হবে না...
কিন্তু একবার এক মেয়ে আমার বাবাকে ফোন করে বলেছিলো আমার ভাই নাকি সেই মেয়েকে বিরক্ত করে.. কিন্তু এতে বাবা মায়ের রাগ লাগে নি,বরং বলেছিলো ঐ মেয়ে যদি ভালো হতো তাহলে তোকে মেনে নিতো।
সেই মেয়েকে বলেছিলো তুমি নিজেকে ঠিক রাখলে তো আমার ছেলে তোমার পিছনে ঘুরতো না কখনও।
অন্যদের বলে বেড়ায় পোলাপান মানুষ একটু তো দুষ্টামি করবেই।
যে কাজটা আমি না করেও নষ্ট মেয়ে হই সে কাজটা ভাই করলে দুষ্টুমি।
আমি যখন রাত নয়টার পর ডিউটি করে বাসায় ফিরি তখন আশেপাসের সব লোক যেনো আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে। তাদের চোখ জিজ্ঞাসু আমাকে দেখে। এত রাতে এই মেয়েটা কোথা থেকে ফিরলো?
শুধু আমি না, যে কোনো মেয়েকে রাতে দেখলে সবাই এভাবেই কেনো দেখে ?
কেনো এই বৈষম্য?
কেনো নারী আর পুরুষকে আলাদা চোখে দেখা হয় যেখানে নারী পুরুষ দুজনেই পৃথিবীতে উন্নত সাধন করে চলেছে?
কেনো আমি সব কথা মুখ বুজে সহ্য করবো,কেনো আমার কথা বলার অধিকার নাই?
কেনো আমি পারবো না রাগ করে নিজের দুঃখটা প্রকাশ করতে?
কেনো আমি ভুল না করেও নষ্ট হই?
যেখানে সরকার নারী পুরুষের সমান অধিকার দিয়েছে সেখানে কেনো চাকুরীজীবী মেয়েদের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে?
কেনো ভাই ভুল করলে সেটা দুষ্টামি?
একটা ছেলে যদি একটা মেয়েকে হয়রান করে তাহলে সমাজ কেনো সেটাকে অপরাধের চোখে দেখে না?
রোজলীন দীপা
কিন্তু যখন ভাই এমন কিছু করে তখন বাবা মা সেটা চেপে যায়,আর সেটা নিয়ে কেউ মাতামাতি করে না।
একবার যখন আমি রাগ করে বান্ধবীর বাসায় ছিলাম আর সন্ধার পর বাসায় আসি তখন এসে দেখি পাশের বাসার মহিলা গুলো আমাদের বাসায় বসে গসীপ করছে...বলছে মেয়ে মানুষের রাগ ভালো না,মেয়ে মানুষের ভর সন্ধ্যায় বাহিরে থাকা ঠিক না হ্যাং ত্যান..
আমার মা আমাকে দেখে তাদের সামনেই বলে বসে মেয়ে জন্ম দেয়া পাপ।
কিন্তু যদি এই একই কাজটা ভাই করে তাহলে বাবা মা দুজনে হতাশ হয়ে পড়ে,খুব অনুনয় বিনয় করে ভাইকে বলে বাবা বাসায় আয়,আর তোকে বকবো না। তখন বাসায় কোনো আশেপাশের মহিলারা আসে না, মজা নিতে।
যখন আমি ক্লাস নাইনে পড়তাম তখন অন্য এলাকার এক ছোকড়া টাইপ বদমাস আমার পিছন পিছন ঘুরে বেড়াতো,মাঝে মাঝে ডাকতো। আমি শুনেও না শোনার ভান করতাম,ভয়ে কাউকে বলতেও পারতাম না।
কিন্তু পাড়াপড়শির গোয়েন্দাগিরিতে খবরটা মায়ের কানে যায়।
মা বলে কি এমন করিস যে ঐ ছেলে তোর পিছে পিছে চলে? আগে কেনো বলিসনি আমাকে?
তুই যদি দেখিস ছেলেটা তোকে বিরক্ত করে তাহলে তুই অন্য রাস্তা দিয়ে যেতিস না কেনো?
কাল থেকে আর তোকে স্কুলে যেতে হবে না...
কিন্তু একবার এক মেয়ে আমার বাবাকে ফোন করে বলেছিলো আমার ভাই নাকি সেই মেয়েকে বিরক্ত করে.. কিন্তু এতে বাবা মায়ের রাগ লাগে নি,বরং বলেছিলো ঐ মেয়ে যদি ভালো হতো তাহলে তোকে মেনে নিতো।
সেই মেয়েকে বলেছিলো তুমি নিজেকে ঠিক রাখলে তো আমার ছেলে তোমার পিছনে ঘুরতো না কখনও।
অন্যদের বলে বেড়ায় পোলাপান মানুষ একটু তো দুষ্টামি করবেই।
যে কাজটা আমি না করেও নষ্ট মেয়ে হই সে কাজটা ভাই করলে দুষ্টুমি।
আমি যখন রাত নয়টার পর ডিউটি করে বাসায় ফিরি তখন আশেপাসের সব লোক যেনো আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে। তাদের চোখ জিজ্ঞাসু আমাকে দেখে। এত রাতে এই মেয়েটা কোথা থেকে ফিরলো?
শুধু আমি না, যে কোনো মেয়েকে রাতে দেখলে সবাই এভাবেই কেনো দেখে ?
কেনো এই বৈষম্য?
কেনো নারী আর পুরুষকে আলাদা চোখে দেখা হয় যেখানে নারী পুরুষ দুজনেই পৃথিবীতে উন্নত সাধন করে চলেছে?
কেনো আমি সব কথা মুখ বুজে সহ্য করবো,কেনো আমার কথা বলার অধিকার নাই?
কেনো আমি পারবো না রাগ করে নিজের দুঃখটা প্রকাশ করতে?
কেনো আমি ভুল না করেও নষ্ট হই?
যেখানে সরকার নারী পুরুষের সমান অধিকার দিয়েছে সেখানে কেনো চাকুরীজীবী মেয়েদের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে?
কেনো ভাই ভুল করলে সেটা দুষ্টামি?
একটা ছেলে যদি একটা মেয়েকে হয়রান করে তাহলে সমাজ কেনো সেটাকে অপরাধের চোখে দেখে না?
রোজলীন দীপা
পল্লবী নার্সিং ইন্সটিটিউট, পল্লবী, ঢাকা।
♦
তখন মাত্র টু বা থ্রীতে পড়ি,বয়সটা ঠিক মনে নাই।
তো একদিন ভাইয়ার এক বন্ধু বাসায় আসে, তখন ভাইয়া বাসায় ছিল নাহ। আম্মু ওই ভাইয়াটাকে সামনের রুমে বসায় চা-নাশতা কিছু একটা দেয়ার জন্য ভিতরে যায়। যেহেতু আমিও সামনের রুমে ছিলাম তখন উনি আমাকে কাছে ডাক দেয় এবং আমকে ওনার কোলে বসায় এবং আমার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে হাত দিতে থাকে আমার খুব অস্বস্তি লাগে আর খুব কান্নাও পায়।
নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করি কিন্তু উনি জোরে আমার হাত ধরে রাখে। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি তখন ভাবতেছিলাম আমি তো ভাইয়ার কোলে বসি, মামার কাছে যাই তখন তো এমন লাগে নাহ কিংবা তারও তো এমন করে নাহ।
উনি এমন করছে ক্যানো?
ক্যামন যেন একটা আতঙ্ক অনুভব করতে থাকি।
ভাগ্যক্রমে আম্মু খুব তাড়াতাড়ি ওই রুমে আসে এবং উনি নরমাল হয়ে যায় আর আমি ছুটে অন্য রুমে চলে যাই। ভয়ে চুপ হয়ে যাই আমি মনে হচ্ছিল আম্মু যেন সব বুঝে যাবে। কি হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম নাহ আমি। যতটুকু মনে আছে স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছিল বেশ এবং যেকোন পুরুষ মানুষের কাছে যেতেই তখন ভয় লাগত।
আমার জীবনের সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের ঘটনার শুরু সেই ছোট্টবেলার এই ঘটনা দিয়েই।
এটা এখন নারীদের জীবনে নিত্য নৈমিত্তিক একটা ব্যাপার। প্রতিদিন রাস্তায়,বাসায়,অফিসে,মার্কেটে,বাসে-ট্রেনে যেকোন ভাবে মেয়েরা এটা ফেইজ করে আসছে এবং আসছি।
হয়ত গায়ে হাত দিয়ে নয় চোখ দিয়ে বা কথার (ইভটিজিং) এর মাধ্যমে। আর রেপ করা ব্যাপারটা তো এখন আর কোন বয়স ও মানে নাহ শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত।
প্রতিদিন-সকাল-বিকাল এইটাই মাথায় নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে
আজ তো ঠিক আছি,
কাল পর্যন্ত কি ঠিক থাকতে পারব?
লীলাবতী
তো একদিন ভাইয়ার এক বন্ধু বাসায় আসে, তখন ভাইয়া বাসায় ছিল নাহ। আম্মু ওই ভাইয়াটাকে সামনের রুমে বসায় চা-নাশতা কিছু একটা দেয়ার জন্য ভিতরে যায়। যেহেতু আমিও সামনের রুমে ছিলাম তখন উনি আমাকে কাছে ডাক দেয় এবং আমকে ওনার কোলে বসায় এবং আমার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে হাত দিতে থাকে আমার খুব অস্বস্তি লাগে আর খুব কান্নাও পায়।
নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করি কিন্তু উনি জোরে আমার হাত ধরে রাখে। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি তখন ভাবতেছিলাম আমি তো ভাইয়ার কোলে বসি, মামার কাছে যাই তখন তো এমন লাগে নাহ কিংবা তারও তো এমন করে নাহ।
উনি এমন করছে ক্যানো?
ক্যামন যেন একটা আতঙ্ক অনুভব করতে থাকি।
ভাগ্যক্রমে আম্মু খুব তাড়াতাড়ি ওই রুমে আসে এবং উনি নরমাল হয়ে যায় আর আমি ছুটে অন্য রুমে চলে যাই। ভয়ে চুপ হয়ে যাই আমি মনে হচ্ছিল আম্মু যেন সব বুঝে যাবে। কি হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম নাহ আমি। যতটুকু মনে আছে স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছিল বেশ এবং যেকোন পুরুষ মানুষের কাছে যেতেই তখন ভয় লাগত।
আমার জীবনের সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের ঘটনার শুরু সেই ছোট্টবেলার এই ঘটনা দিয়েই।
এটা এখন নারীদের জীবনে নিত্য নৈমিত্তিক একটা ব্যাপার। প্রতিদিন রাস্তায়,বাসায়,অফিসে,মার্কেটে,বাসে-ট্রেনে যেকোন ভাবে মেয়েরা এটা ফেইজ করে আসছে এবং আসছি।
হয়ত গায়ে হাত দিয়ে নয় চোখ দিয়ে বা কথার (ইভটিজিং) এর মাধ্যমে। আর রেপ করা ব্যাপারটা তো এখন আর কোন বয়স ও মানে নাহ শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত।
প্রতিদিন-সকাল-বিকাল এইটাই মাথায় নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে
আজ তো ঠিক আছি,
কাল পর্যন্ত কি ঠিক থাকতে পারব?
লীলাবতী
সরকারি বরিশাল কলেজ, বরিশাল।
♦
নারী শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক বঞ্চনা, অবহেলা ও উপেক্ষা। পরিবারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম মানেই পিতা-মাতার নিরব হৃদয় ভার। পরিবারের পুত্র সন্তানটি ঘুম থেকে উঠে তার নিজের বিছানাটি না গোছালেই মা খুশি হয়, মা তার মধ্যে দেখতে পায় একটি পুরুষের জন্ম হচ্ছে। কিন্তু একটি মেয়ে বিছানা না গোছালে একটি নারীর মৃত্যু দেখে মা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সমাজে যখন একটি নারীর সতীত্ব সম্বন্ধে প্রশ্ন ওঠে তখন তাকে সে দোষ থেকে মুক্তির জন্য বিষ প্রদান করা হয়। কিন্তু সেই একই দোষ যখন একজন পুরুষ করেও রাত্রিশেষে পত্নীকে তার চরণের ধুলি স্পর্শ করিয়ে আসেন। এভাবেই একটি পরিবার থেকে নারী বৈষম্যের শুরু হয়।
হায়াতুন্নেসা
বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ
আরও পড়ুন : মুক্তি
সৌন্দর্য বনাম যোগ্যতা
নারী
Comments
Post a Comment