বিপ্লবী প্রেরণায় ক্ষুদিরাম বসুর আত্মদান



"১৮ বছর বয়স কী দুঃসহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি
১৮ বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি"


ক্ষুদিরামের জন্ম ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর এবং তাঁকে ফাঁসি দেয়া হয় ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট। অর্থাৎ তাঁর আয়ুষ্কাল মাত্র ১৮ বছর ৮ মাস ৮ দিন। তিনি কী এমন করেছিলেন, যাতে ব্রিটিশরা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিতে বাধ্য হয়? ক্ষুদিরামের জীবনী আলোচনার পাশাপাশি এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা থাকবে প্রবন্ধের বাকি অংশে।

ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীর অন্তর্গত মেদিনীপুর জেলা শহরের কাছাকাছি কেশপুর থানার অন্তর্গত মোহবনী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। পিতা ত্রৈলকানাথ বসু এবং মাতা লক্ষ্মীপ্রিয় দেবীর চতুর্থ সন্তান ক্ষুদিরাম বসু তাঁর বড় বোনের কাছেই বড় হন।

ক্ষুদিরাম বসু’র শিক্ষাজীবন শুরু হয় তমলুকের হ্যামিলটন স্কুলে। এরপর মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে । এ স্কুলে পড়ার সময়েই ক্ষুদিরাম সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সান্নিধ্যে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হন। এরপরে বিপ্লবী নেতা শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার নিবেদিতার অনুপ্রেরণায় বিপ্লবীদের নবগঠিত যুগান্তর দলে যোগ দেন। তিনি অল্প সময়েই ঐ বিপ্লবী দলের গুরুত্বপূর্ণ এবং সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন। স্বদেশী আন্দোলনে বিলেতি পণ্য বয়কট এবং বিলাতি লবনের নৌকা ডোবানো'র মত কাজে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ১৯০৬ সালে বিপ্লবী পত্রিকা 'সোনার বাংলা' বিতরণের সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে আবার পুলিশকে মেরে পালিয়ে যান ক্ষুদিরাম বসু। এ অভিযোগে ক্ষুদিরাম পরে গ্রেফতার হলে বয়স কম হওয়ায় সরকার মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। তিনি ১৯০৭ সালে বিপ্লবীদের অর্থের প্রয়োজনে মেলব্যাগ লুটে অংশ নেন। আদালত প্রাঙ্গণে 'বন্দে মাতরম' স্লোগান তোলার কারণে কলকাতার তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড এক কিশোরকে প্রকাশ্যে বেত মারার নির্দেশ দিলে এই শাস্তির বদলা নিতে এবং বিপ্লবীদের প্রতি দমনমূলক কার্যকলাপের জন্য কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় বিপ্লবী দল 'যুগান্তর'। কিংসফোর্ড নিরাপত্তার কারণে মজফফরপুরে বদলী হয় এবং তাকে হত্যার দায়িত্ব পান ক্ষুদিরাম বসু এবং প্রফুল্ল চাকী। ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল বিহারের মজফফরপুরে রাত ৮ টার সময় ক্ষুদিরাম বসু এবং প্রফুল্ল চাকী রাতের অন্ধকারে কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে ভুল করে কেনেডি সাহেবের স্ত্রী এবং কন্যাকে বহনকারী ঘোড়ার গাড়িতে বোমা হামলা করেন। কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। পরদিন ক্ষুদিরাম বসু ওয়েইনি স্টেশনে ধরা পড়েন। অপর বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী রিভলবারের গুলিতে আত্মঘাতী হন। কয়েকমাস ধরে বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির আদেশ হয়। ফাঁসির আদেশ শুনে ক্ষুদিরাম বলেন যে, মৃত্যুতে তাঁর বিন্দুমাত্র ভয় নেই। ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কথিত আছে যে ক্ষুদিরাম বসু ফাঁসির মঞ্চের দিকে হাসতে হাসতে এগিয়ে যান।

তাঁর এই আত্মদানের উপর ভিত্তি করে লোককবি পিতাম্বর দাস রচনা করেব "একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি" লোকসংগীতটি। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু'র ছিল অন্যায়ের প্রতি তীব্র অনুভূতি । ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভীত কাঁপিয়ে দেয়া ক্ষুদিরাম অসহ্য দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ, নির্যাতন এমনকি মৃত্যুকেও বরণ করে নেন শুধু দেশ মাতৃকার মুক্তির প্রশ্নে। আগামী ১১ আগস্ট ক্ষুদিরাম বসুর মৃত্যুর ১১১ বছর পূর্ণ হবে  আমরা আজকে যে সমাজে, যে সভ্যতায় বাস করছি তা শাসক-শোষকদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনতে ক্ষুদিরাম বসু'র মত বিপ্লবীদের নিজের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ জীবনকে উৎসর্গ করতে হয়েছে । তাই আমরা তাঁদের স্মরণ করি । তাঁরা আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন মুক্ত মানবসমাজ গড়ার স্বপ্ন এবং এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে লড়াইয়ের প্রেরণা । আমাদের এই বাংলাদেশ আমাদের পূর্বসূরিদের লড়াইয়ের ফসল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই ফসলে এখনো লুটপাট চালায় স্থানীয় ও নয়া উপনেবেশিক শাসক-শোষক। আজকের দেশ একটা গণতন্ত্রের মোড়কে স্বৈরতন্ত্রের কবলে পড়েছে। রাতের ভোটে নির্বাচিত (!) সংসদ নিয়ে চলছে জাতীয় সংসদ, দলীয় আনুগত্যে চলছে বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী সকল ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত। তাই স্বাধীনতার স্বপ্নসাধ- সুখী, সমৃদ্ধ ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে আপনার আমার মধ্য থেকে ক্ষুদিরাম তৈরি হওয়া দরকার। যারা মানবমুক্তির লড়াইয়ে নিজের জীবনকেও তুচ্ছ করবে। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু লাল সালাম। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।

জাহাঙ্গীর আলম জামাল
সহ সভাপতি ; বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বরিশাল জেলা সংসদ।


Comments

  1. Welcome to the Online Casino Website! - ChoGiocasino
    Welcome to the Online Casino Website! - ChoGiocasino · 카지노사이트 Top Rated Online Casino for Slots · 바카라 Newest Online 샌즈카지노 Casino for Slots · Best Online Slots Bonuses

    ReplyDelete

Post a Comment