আহারে উন্নয়ন!


রাহাত খান

বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে এখন যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি ভাসছে, সেটি হচ্ছে 'উন্নয়ন'। আমাদের দেশে আসলেই অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে (তাতে অবশ্য সুন্দরবন ধ্বংস হচ্ছে, তাতে কিছু যায় আসেনা) , মেট্রোরেল হচ্ছে।
আর অন্যদিকে শহরগুলোয় ভিক্ষুকের সংখ্যাও বাড়ছে। একটি শিশু যে কিনা লেখাপড়ায় মনোযোগী হবে, তাকে আজ কামারের দোকানে রড পিটাতে হচ্ছে, আবার দেখা যায়, সে শিশুটি ন্যায্য মজুরিটুকুও পাচ্ছেনা। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে মানে এই না (আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে) দেশের মানুষ মহাসুখে আছে। বড় বড় সেতু, কলকারখানা, সুখ সমৃদ্ধি বয়ে আনেনা নিশ্চয়ই। এভাবে বলা যায় -
একটি পরিবারের কর্তা পরিবারের সদস্যদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ না করে সে তার বাড়ির চারপাশে সীমানাপ্রাচীর গড়ল, বাড়ির দেয়াল উন্নয়ন করল, ওদিকে তার সন্তানেরা তিনবেলা খেতেও পায়না! সেদিকে তার কোন খেয়ালও নেই। বাইরে থেকে বাড়ি দেখে মানুষ বলে, কত উন্নত বাড়ি! আসলে কতটুকু উন্নত, কতটুকু কী, তা বাড়ির লোকজনই জানে।
ঠিক এমনই অবস্থা আজকের বাংলাদেশের। দেশের অনেক মানুষের জন্য তিনবেলা ভাত জোটানো কষ্টকর। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সরকার যদি কেবল নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করতে থাকে, যদি এক মুঠো চালের জন্য লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে একটি শিশুকে কামারের দোকানে রড পেটাতে হয়, সে উন্নয়ন দিয়ে কী হবে! একে উন্নয়ন না বলে শোষণ বলা উচিৎ, লুটপাট বলা উচিৎ। গরীবের মুখের ভাত কেড়ে নিয়ে লুটপাটকারীদের মুখে তুলে দেয়ার সংস্কৃতির নাম দেয়া হয়েছে আজ 'উন্নয়ন'।

আমাদের সমাজটা এমন হওয়া উচিৎ, যেখানে থাকবেনা কোন ধনী গরীব ভেদাভেদ। একজন ধনীর সন্তান যে স্কুলে পড়বে, একজন রিক্সাওয়ালার সন্তানও সে স্কুলে পড়বে। একজন কোটিপতি রাষ্ট্রের কাছে থেকে যে সুবিধা পায়, একজন কৃষকও ওই একই সুবিধা পাবে। তাহলেই হবে সত্যিকারের উন্নয়ন। আর, ছাত্র ইউনিয়ন এমনই এক সমাজ গড়ার ডাক দিয়ে যায় আপনাকে। ছাত্র ইউনিয়নের সমাজ বদলের এ লড়াইয়ে আপনাকে নিমন্ত্রণ।

রাহাত খান : সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বরিশাল জেলা সংসদ; শিক্ষার্থী, ব্রজমোহন বিদ্যালয়।

Comments

Post a Comment