'আন্দোলন ছিল কোটা সংস্কারের, বাতিলের নয়’


আনু মুহাম্মদ

অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা সংস্কারের মতো একটি ন্যায্য দাবি নিয়ে শুরু থেকেই সরকারের অযৌক্তিক পদক্ষেপের বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা আসলেই কঠিন। আন্দোলনটা ছিল কোটা সংস্কারের। কোটা বাতিলের কোনো আন্দোলন ও দাবি কেউ করেনি। আন্দোলনকারীরা বারবার বলেছে, আমরা কোটা বাতিল চাই না, সংস্কার চাই। এমনকি, সংস্কার কিভাবে করা উচিত সেটি নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সুপারিশও করেছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষ থেকেও সুপারিশ এসেছে যে এটা কমানো উচিত, সংস্কার করা উচিত।

তারপরেও কোটা বাতিল করার ব্যাপারটি কেনো আসলো! সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি রাগের বহিঃপ্রকাশ ছিল। কিন্তু সেটিকেই একটা সিদ্ধান্ত হিসেবে নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ কমিটি কী বিবেচনায় কোটা বাতিল করল, এর কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাইনি।
শুরু থেকেই আন্দোলনকারীরা কোটাপ্রথার সংস্কার চেয়ে আসছিলেন

কোটা শুধু বাতিলই করা হয় নাই। এবার অন্যদেরকেও আহ্বান জানানো হয়েছে কোটার জন্য আন্দোলন করার। এর ফলে সমাজে একটি অপরিণামদর্শী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কোটা নিয়ে সরকারের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার কারণে এটা টেকসই কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এর ফলে সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব-সংঘাত তৈরি হবে।



সফল আন্দোলন করতে পারলে কোটা সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে, প্রধানমন্ত্রীর এ ধরণের কথা অযৌক্তিক। তিনি তো আন্দোলনের আহ্বান জানাতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারি কমিটির উচিত, যে ব্যাপারে আন্দোলন হয়েছে তার যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া।


বেশ কয়েক মাসের তীব্র আন্দোলনের মধ্যে অনেকগুলো সমাধানও পাওয়া গেছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নারী ও মুক্তিযোদ্ধা সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত হলে তা গ্রহণযোগ্য হতো। জনগণের মধ্য থেকে যদি কোনো দাবি উত্থাপিত হয়, সরকার তার কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে না গিয়ে তো রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে না। সরকার সেটাকে যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। রাগের বহিঃপ্রকাশ একবার দেখালেও সেটিকে মাসের পর মাস টেনে আনতে পারে না এবং সেটি প্রশাসনিক পদক্ষেপও হতে পারে না। একদিকে আন্দোলনকারীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন চালানো ও তাদের আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে, এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সমাজের মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব-সংঘাত ঘটানোর চেষ্টা চলছে। কোনোভাবেই এটা ব্যাখ্যা করা যায় না।


[অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংকলিত ]

Comments